সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) থেকে এম এম জামান, কালের খবর : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে রবিউল ইসলাম নামে এক যুবক, গত দেড় যুগেরও অধিক সময় ধরে অন্ধকার কুয়ার মধ্যে শিকলে বন্দি। মাত্র দশ বছর বয়সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে দীর্ঘ আঠারো বছর যাবত অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছে।
শুক্রবার (৩০ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিউল ইসলাম বাড়ির একটি ভাঙ্গা ঘরের ভেতর ছোট গর্তে( কুয়ায়) শুয়ে আছে। কোমরে লোহার শিকল বাঁধা। মুখে ঘন দাড়িভর্তি। পরনে কোন কাপড় নেই।
তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় রবিউল ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বর্নিরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের বড় ছেলে। হতভাগা বাবা নুরুল ইসলাম পেশায় একজন কৃষক। আর্থিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় পরিবারের একটু স্বচ্ছলতার জন্য মাঝে মাঝে ভ্যান চালিয়ে বাড়তি উপার্জনের চেষ্টা করেন। ছেলের মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থা তাকে প্রচন্ডভাবে ব্যথিত করলেও তিনি নিরূপায়। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সামান্য জমিজমা আর নিজের অর্জিত উদ্বৃত্ত অর্থের সবটাই ছেলে রবিউলকে সুস্থ করতে তার চিকিৎসার পেছনে ব্যয় করেছেন। চিকিৎসক, কবিরাজ, ফকির সবই দেখিয়েছেন। কিন্তু কোন ভালো ফলাফল অর্জিত হয়নি।
রবিউলের বাবা নুরুল ইসলাম দৈনিক কালের খবরকে বলেন রবিউল দশ বছর পর্যন্ত সুস্থ স্বাভাবিক ছিল। হেসেখেলে বেড়াত। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ করে তার মধ্যে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থা দেখতে পাই। এরপর নিজের সাধ্যমতো চিকিৎসার চেষ্টা করেও সুস্থ করতে পারিনি।
রবিউলের ছোট ভাই ইনামুল হোসেন বলেন, বর্তমানে ভাই যে ঘরে থাকে এখানে আমাদের মুদি দোকানঘর ছিল। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর এই ঘরেই আমার ভাইটা এইভাবে পড়ে আছে। মাজায় ও পায়ে শিকল দিয়ে বাঁধা। সারাদিন শুধু হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে। হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না। শরীরে কোনো কাপড়-চোপড় রাখে না।
এ ব্যাপারে ময়না ইউনিয়নের বাসিন্দা শিক্ষক মুকুল কুমার বোস বলেন, যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে রবিউলকে হয়তো সুস্থ করা যেত। কারণ রবিউলের পিতা দরিদ্র হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেননি। কোন আর্থিক সামর্থ্যবান লোক রবিউলের চিকিৎসায় এগিয়ে এলে হয়তো ছেলেটি আবার সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।
তবে বেসরকারি সংগঠন ক্ষুধার্তের আত্মচিৎকারের পক্ষথেকে মোহাম্মাদ শামীম প্রধান ও সুমন রাফি পবিত্র ঈদুল আজহায খাদ্য সামগ্রী সহ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
এ ব্যাপারে অত্র ময়না ইউপি চেয়ারম্যান নাসির মো, সেলিম বলেন ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন। সিকল খুলে দিলেই অন্যত্র চলে যায়। কাপড়ও পরনে রাখতে চায়না।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অামার নিকট ওদের পরিবারের কেউ কখোনো সাহায্যের ব্যপারে আসেনি। এলে আমি নিশ্চয়ই সাহায্য করব।